স্যার, আজ আমি আপনার উত্তরপত্রে
রক্ত কি কি উপাদান দ্বারা গঠিত?
শিরা এবং ধমনীর পার্থক্য লিখবো না,
কিংবা আঁকবো না কোন অজ্ঞাত হৃদপিণ্ডের নাম মাত্র চিত্র;
ব্যাখ্যা করবো না মাইটোক্রোন্ডিয়া কিংবা ফুসফুসের কাজ !!
পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে লিখবো না কোন বিশদ উত্তর
আজ এক দুর্বল ছাত্রের মনের কিছু কথা বলবো স্যার।
কাল রাতে আমি আমার নিউরনে কিছু বিজ্ঞানীদের সহস্র বচন ঢুকিয়েছি স্যার,
সহসা ঢুকতে চাইনি ওরা স্যার! টেনে হিড়চে ওদের ঢুকিয়েছি ।
প্রোটোপ্লাজম,সাইটোপ্লাজম,নিউক্লিয়াস,ক্রোমোজোমে,ডি এন এ,আর এন এ
কিছুই বাদ রাখিনি !সব গদ গদ করে গিলেছি ।
একটু কষ্ট হয়েছে বটে স্যার,
কারণ সেদিনের পড়া ফিজিক্সের কিছু সমীকরণ মুখে জড়িয়ে যাচ্ছিল,
নিউক্লিয়াস রূপী আমিতে আমার স্বপ্ন রূপী ইলেকট্রন গুলো
ঘুরে ঘুরে কেবলই চার্জ হারাচ্ছিল...
দেখতে না দেখতেই তা ভবঘুরে প্রোটনে পরিণত হয়ে গেল স্যার।
আইনিষ্টানের E=mc2 সমীকরণ আমার কাছে
ইংরেজি তিনটি অক্ষর ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি স্যার;
তবুও আমি প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম, গতিশক্তি=ভর x (আলোর বেগ)2
কিন্তু পারিনি স্যার,এর পরিবর্তে লিখে এসেছি জীবন=স্বপ্ন x (হতাশার)2 এর গল্প
আচ্ছা বলুন তো স্যার,
কার মাথায় আপেল পড়লো না বেল পড়লো,
তা জেনে আমার লাভ কি?
কেনই বা তা উপরে না গিয়ে নিচের দিকে পড়লো,
তা ভাববারই বা আমার কি দরকার?
যেখানে আপেলের রঙ রূপী টমেটো দেখলেই পাকস্থলীর গর্জন শোনা যায়
সেখানে এই সব মহাজাগতিক বিষয় চিন্তা করা সত্যিই...
মধ্যবিত্ত এক পরিবারের সন্তানের ক্ষেত্রে বিশাল দ্বায়।
থাক স্যার!! যা গত হয়েছে তা সবসময় জ্ঞাত না হওয়াই ভাল।
একের পর এক মতবাদ মুখস্থ করেছি,
মানসিক কৃতদাসের মত লাইনের পর লাইন মুখস্থ করে নিউরন গুলোকে খাটিয়েছি,
পারিশ্রমিক হিসেবে আপনার দয়া বশত কিছু নাম্বার পেয়েছি, নিজেকে ধন্য ভেবেছি।
স্যার, আপনার সর্বশেষ সাজেশনের আশায় অপেক্ষা করেছি সারা বছর,
সোনার হরিণ রূপী আপনার প্রশ্নে গুলো পড়ে পরীক্ষার খাতায় কোন মতে বমি করে;
জিপিএ ৫ নামক শব্দের মধ্যে বন্দী করেছি আমার মেধাকে !!
নিজের বিশ্বাস এর সাথে প্রতিনিয়ত বিশ্বাস ঘাতকটা করেছি
কখনো নিজেকে বানর কিংবা বন মানুষের আদিরূপ হিসেবে গণ্য করে ,
মনের অজান্তের বারংবার দীক্ষিত হয়েছি স্যার।
স্যার সেই যে ছোট বেলা থেকে 'ধরি' আর 'মনে করি' করে অংক কষতে কষতে
কবে যে নিজের মন কেই হারিয়ে ফেলেছিলাম তাও বুঝতে পারিনি স্যার।
অবশেষে বুঝেছিলাম যখন সাবেরার প্রেমে পড়ি !!
গণিত আমার জীবনে এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে,
ওকে ভালবাসার আগে আমার ধরে নিতে হয়েছিল আমার একটি মন আছে।
দুঃখিত স্যার কিছু মনে করবেন না।
এটা কোন উপপাদ্যের কাল্পনিক কোন লম্বরেখা নয় স্যার,নিতান্তই বাস্তব সত্য।
স্যার এসিড ক্ষারের বিক্রিয়ায় কেন লবণ আর পানি উৎপন্ন হয়
তা আমার মহাশয়দের ধার করা বিদ্যা থেকে প্রমাণ করতে পেরেছি ।
কিন্তু প্রতিনিয়ত আমার মনে স্বপ্ন আর বাস্তবতার যে ক্রিয়া বিক্রিয়া ঘটে চলেছে
আর কেনই বা তা চোখের পানি এবং হতাশার উৎপাদে পরিণত হচ্ছে..
তা বিন্দু মাত্র ব্যাখ্যা করতে পারিনি স্যার,
আমি এতটাই একজন দুর্বল ছাত্র ...