::::::::::::::::::::::::::::::::::Welcome Note:::::::::::::::::::::::::::

"সময়ের সিথানে স্বপ্ন নিয়ে প্রতিনিয়ত ঘুমিয়ে থাকি কিংবা দুঃস্বপ্ন নিয়ে জেগে উঠি। একটা সময় ছিল আমার তখন ফড়িং জীবন ছিল। এখন তা বাক্স বন্দী অতীত। ফড়িং এর রঙিন পাখা গুলো এখন বিবর্ণ। কথা গুলো অর্থহীন প্রলাপ ... আচ্ছা প্রলাপ তো অর্থহীন ই হয়, তাই না? কিন্তু আমার যে আর কিছুই নেই... কিছু কল্পনা মেঘের কাছে জমা রেখে ছিলাম... একদিন মেঘ আমাকে কিছু না বলেই উড়ে গেল...আকাশের শেষ প্রান্তে... আমি দিগন্তের পর দিগন্ত ছুটে গেছি... আমার কল্পনার খোঁজে ... না পাইনি... ও তখন বৃষ্টি হয়ে..পাহাড়ের সাথে সন্ধি করে.. সমুদ্রের হয়ে গেছে... আমার তখন আর কিছুই নেই... হয়ত কিছু থাকতে নেই... আমি অন্যের আশ্রয়ে বেঁচে আছি এখন... অন্যের রঙে বিবর্ণ ছবি দেখি... এই নিয়ে আমার এই সাজানো বাড়ী..."

একজন দুর্বল ছাত্র

 
স্যার, আজ আমি আপনার উত্তরপত্রে
রক্ত কি কি উপাদান দ্বারা গঠিত?
শিরা এবং ধমনীর পার্থক্য লিখবো না,
কিংবা আঁকবো না কোন অজ্ঞাত হৃদপিণ্ডের নাম মাত্র চিত্র;
ব্যাখ্যা করবো না মাইটোক্রোন্ডিয়া কিংবা ফুসফুসের কাজ !!
পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে লিখবো না কোন বিশদ উত্তর
আজ এক দুর্বল ছাত্রের মনের কিছু কথা বলবো স্যার।

কাল রাতে আমি আমার নিউরনে কিছু বিজ্ঞানীদের সহস্র বচন ঢুকিয়েছি স্যার,
সহসা ঢুকতে চাইনি ওরা স্যার! টেনে হিড়চে ওদের ঢুকিয়েছি ।
প্রোটোপ্লাজম,সাইটোপ্লাজম,নিউক্লিয়াস,ক্রোমোজোমে,ডি এন এ,আর এন এ
কিছুই বাদ রাখিনি !সব গদ গদ করে গিলেছি ।

একটু কষ্ট হয়েছে বটে স্যার,
কারণ সেদিনের পড়া ফিজিক্সের কিছু সমীকরণ মুখে জড়িয়ে যাচ্ছিল,
নিউক্লিয়াস রূপী আমিতে আমার স্বপ্ন রূপী ইলেকট্রন গুলো
ঘুরে ঘুরে কেবলই চার্জ হারাচ্ছিল...
দেখতে না দেখতেই তা ভবঘুরে প্রোটনে পরিণত হয়ে গেল স্যার।

আইনিষ্টানের E=mc2 সমীকরণ আমার কাছে
ইংরেজি তিনটি অক্ষর ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি স্যার;
তবুও আমি প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম, গতিশক্তি=ভর x (আলোর বেগ)2
কিন্তু পারিনি স্যার,এর পরিবর্তে লিখে এসেছি জীবন=স্বপ্ন x (হতাশার)2 এর  গল্প

আচ্ছা বলুন তো স্যার,
কার মাথায় আপেল পড়লো না বেল পড়লো,
তা জেনে আমার লাভ কি?
কেনই বা তা উপরে না গিয়ে নিচের দিকে পড়লো,
তা ভাববারই বা আমার কি দরকার?
যেখানে আপেলের রঙ রূপী টমেটো দেখলেই পাকস্থলীর গর্জন শোনা যায়
সেখানে এই সব মহাজাগতিক বিষয় চিন্তা করা সত্যিই...
মধ্যবিত্ত এক পরিবারের সন্তানের ক্ষেত্রে বিশাল দ্বায়।
থাক স্যার!! যা গত হয়েছে তা সবসময় জ্ঞাত না হওয়াই ভাল।

একের পর এক মতবাদ মুখস্থ করেছি,
মানসিক কৃতদাসের মত লাইনের পর লাইন মুখস্থ করে নিউরন গুলোকে খাটিয়েছি,
পারিশ্রমিক হিসেবে আপনার দয়া বশত কিছু নাম্বার পেয়েছি, নিজেকে ধন্য ভেবেছি।

স্যার, আপনার সর্বশেষ সাজেশনের আশায় অপেক্ষা করেছি সারা বছর,
সোনার হরিণ রূপী আপনার প্রশ্নে গুলো পড়ে পরীক্ষার খাতায় কোন মতে বমি করে;
জিপিএ ৫ নামক শব্দের মধ্যে বন্দী করেছি আমার মেধাকে !!

নিজের বিশ্বাস এর সাথে প্রতিনিয়ত বিশ্বাস ঘাতকটা করেছি
কখনো নিজেকে বানর কিংবা বন মানুষের আদিরূপ হিসেবে গণ্য করে ,
মনের অজান্তের বারংবার দীক্ষিত হয়েছি স্যার।

স্যার সেই যে ছোট বেলা থেকে 'ধরি' আর 'মনে করি' করে অংক কষতে কষতে
কবে যে নিজের মন কেই হারিয়ে ফেলেছিলাম তাও বুঝতে পারিনি স্যার।
অবশেষে বুঝেছিলাম যখন সাবেরার প্রেমে পড়ি !!
গণিত আমার জীবনে এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে,
ওকে ভালবাসার আগে আমার ধরে নিতে হয়েছিল আমার একটি মন আছে।
দুঃখিত স্যার কিছু মনে করবেন না।
এটা কোন উপপাদ্যের কাল্পনিক কোন লম্বরেখা নয় স্যার,নিতান্তই বাস্তব সত্য।

স্যার এসিড ক্ষারের বিক্রিয়ায় কেন লবণ আর পানি উৎপন্ন হয়
তা আমার মহাশয়দের ধার করা বিদ্যা থেকে প্রমাণ করতে পেরেছি ।
কিন্তু প্রতিনিয়ত আমার মনে স্বপ্ন আর বাস্তবতার যে ক্রিয়া বিক্রিয়া ঘটে চলেছে
আর কেনই বা তা চোখের পানি এবং হতাশার উৎপাদে পরিণত হচ্ছে..
তা বিন্দু মাত্র ব্যাখ্যা করতে পারিনি স্যার,

আমি এতটাই একজন দুর্বল ছাত্র ...

নীল

শুনেছি আকাশের রঙ নাকি নীল
কখনো সময় করে দেখা হয়নি;
সেদিন পূর্ণিমা রাতে হঠাৎ মনে হল
আকাশ টা দেখা দরকার-
কই নীল এর ছিটে ফোঁটাও তো দেখলাম না...
যাই হোক, আমি হয়ত নীল রঙই চিনি না ।
শুনেছি কষ্টের রঙ ও নাকি নীল
এটা নাকি আবার অনুভব করতে হয়;
আমি আমার জীবন থেকে
ঋণ করা কিছু সুখ অনুভব করতে লাগলাম...
সেখানেও নীল খুঁজে পেলাম না
কেউ কেউ বলে ভালবাসার রঙ ও নাকি নীল
তার মানে কি এই দ্বারায়
ভালবাসা আর কষ্ট সমার্থক
কখনো অভিধান খুলে দেখা হয়নি
রঙধনুর ও নাকি কষ্ট আছে
মানে নীল রয়েছে
রয়েছে সমুদ্রের ও নীল
এর জল নাকি নোনা
তবে কি নয়নের জল ও নীল?

সাদা ভাত কিংবা শিউলি ফুলের গল্প

দুই বেলা সাদা ভাত খাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আজ আমার দিন কাটে
অপরের বাগানের শিউলি ফুলের গন্ধে ঘুম ভাঙ্গে
নিজেকে বড় বোঝা মনে হয় এই মহাকালে,

হে দয়াময় ঈশ্বর সব আশীর্বাদ কি তোমার
ঐ কাগজের আবেগে মুড়ানো ফুল ওয়ালাদের?
জানি না, জানতেও চাই না
আর জেনেই বা কি হবে?
সাদা ভাতের মোহ কি তাতে আমার একটুকুও কমবে!!

আমার পাকস্থলীর মিউকোসা স্তরে যখন ক্ষুধার তীব্র আর্তনাদ
পেশী গুলো যখন কান্ত!
ওরা তখন রঙ্গ বিলাসে মত্ত!

মাঝে মাঝে ওদের কান্দ দেখে আমার খুব হাসি পায়
গ্লাসে মুড়ানো কি সব দোকানে ওরা ভীর করে,
বন রুটি সদৃশ একটি বস্তু নিয়ে দেখি তার মধ্যে কি সব লাল লাল রক্ত মিশায়
আমি ভেবে বলি শেষ পর্যন্ত তোদের রক্তই পছন্দ !!
আমি ঠিক উচ্চারণ ও করতে পারি কি যে কঠিন কঠিন শব্দ ওরা খায়,
সেনডুয়েজ, পেষ্টী, রুল কুল, বার্গার আর যে কত কি...
তাই বোধ হয় ওদের আবেগ গুলো ও এত কঠিন

আচ্ছা !
আমি তো গ্লাডিওলাস কিংবা জবা চাইনি
চাইনি রক্তাক্ত কৃষ চূড়া...
চেয়েছি শুধু শিউলি ফুলের সুবাস রূপী সাদা ভাত।

আমি পৃথিবীর সব মায়া ছাড়তে পারি
কিন্তু সাদা ভাতের মায়া কখনো ছাড়তে পারবো না
এই সাদা ভাত আমাকে কাদায়
এই সাদা ভাতই আমাকে হাসায় ।

সাদা ভাতের নেশা যে কত তীব্র
কত স্বাদ তা শুধু সাদা ভাত ওয়ালারা বুঝতে পারে।

শুনেছি ওরা নাকি বছরে এক বার সাদা ভাত খায়
তাও নাকি কি সব টেডি শন
আবার কেউ বলে সখ করেই খায়
তখন আমার নিজেকে খুব গর্বিত মনে এই ভেবে
ওরা ওদের সখ কিংবা টেডি শন একদিন মিটাতে বা ধরে রাখতে পারে
আমি সারা বছর পারি
এই খানেই তো আমার আর ওদের ব্যবধান

কারণ সাদা ভাতের মর্ম সাদা ভাত ওয়ালারাই বুঝে
ওরা কি বুঝবে!!
রক্ত খেতে খেতে ওরা ওদের আসল রক্তকেই ভুলে গেছে ।

একজন পরাজিত প্রেমিকের রক্তের ব্যথিত নীল আর্তনাদ

একজন পরাজিত প্রেমিকের রক্তের ব্যথিত নীল আর্তনাদ
কতটা যে নির্মম হতে পারে তা আমি কখনোই উপলব্ধি করতে পারতাম না,
যদিনা আমি সেই পরাজিত প্রেমিক না হতাম !!

অলিন্দ থেকে নিলয়, নিলয় থেকে ধমনী, ধমনী থেকে ফুসফুস, ফুসফুস থেকে একে একে ছড়িয়ে পড়েছে হৃদপিণ্ড হয়ে সমস্ত দেহে
পরাজিত প্রেমিকের ব্যথিত নীল আর্তনাদই রক্ত!!

কোন কিছুই বাদ রাখেনি সে,
তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে তার হারানো কোন এক অপরিণত অস্তিত্বকে
খুঁজেছে তার অপূর্ণাঙ্গ প্রেমের অতীত যাতনাকে,
বিপন্ন সেই মুহূর্তকে,অকথ্য সেই কাহিনীকে,অব্যক্ত সেই ভাষাকে
বিকৃত সেই আবেগ, ধ্বংসাত্মক সেই অনুভূতি,অমার্জনীয় সেই পরিণতিকে
কিছুই বাদ রাখেনি সে...
শুধু মাত্র পরাজিত প্রেমিকের নীল আর্তনাদই রক্তকে
বিন্দু মাত্র শান্ত করার জন্য!!

আমার নিউরনে প্রতিটি সিন্যাপসে সিন্যাপসে তখন এক অস্বাভাবিক স্থবিরতা,
অবিকল অতীতের কোন অপূর্ণ স্বপ্ন দেখার সেকি হাহাকারে নিত্য আমার নিষ্ফলা নেত্রের!!
প্রতিটি শিরায় শিরায় প্রেমিকার কাছে প্রণয় ভিক্ষার সে কি মর্মান্তিক দৃশ্য!!

না! এ কোন ট্যাজিডি উপন্যাস কিংবা কোন নাটকে সংলাপ নয়,
নয় কোন মেগা সিরিয়ালের খণ্ড কোন চিত্রনাট্য!!
এ শুধু পরাজিত প্রেমিকের নীল আর্তনাদই রক্তের নিশ্চুপ চিৎকার মাত্র।

তবুও আমার চুপসে যাওয়া চলবে না
শ্রাবণ রাতে বিপুল জোছনায় খুঁজে ফিরতে হবে হারানো শৈশবকে
শিশিরে ভেজা ঘাস ফুলের পরশ মায়ায় শিহরিত করতে হবে ব্যথিত রক্তকে,
পাড় ভাঙ্গা কোন এক নদীর লিলুয়া বাতাসে উদাস করতে হবে আপন মন
চিত্রকল্পে আকা ডানা মেলা গাংচিল দেখে অবাক করতে হবে এই দুইটি চোখ।

এত কিছুর পরও যেন কোথায় এক বিরাজমান শূন্যতা,বিষণ্ণতা
পরাজিত প্রেমিকের ব্যথিত নীল আর্তনাদই রক্তের নির্মম ভাবাবেগ হয়ত !!